Bitcoin কি? Bitcoin আদান প্রদানের সুবিধা এবং অসুবিধা

Bitcoin কি?

Bitcoin আদান প্রদানের সুবিধা এবং অসুবিধা? 

আসসালামু আলাইকুম টেকজনগণ, আজকের ব্লগে আমরা শিখবো, Bitcoin কি? Bitcoin আদান প্রদানের সকল সুবিধা এবং অসুবিধা এবং Bitcoin নিয়ে সম্পূর্ণ তথ্য!! Everything About Bitcoin in Bangla. তাই, এই ব্লগটি আপনি খুবই মনোযোগ সহকারে পড়ুন, আমি আশা করি আপনি আজকে অনেক কিছুই জানতে পারবেন, তো চলুন শুরু করা যাক।

bitcoin in bangla


Bitcoin কি?

বিটকয়েন হলো একটি ভার্চুয়াল মুদ্রা (Virtual Currency or Digital Currency), যা কিনা ওপেন সোর্স ক্রিপ্টোগ্রাফিক প্রোটকলের (Blockchain) মাধ্যমে একজন থেকে আরেকজনকে সরাসরি লেনদেন করা যায়। এটাকে পিয়ার টু পিয়ার (Peer to Peer) লেনদেনও বলা হয়ে থাকে। অন্যান্য মুদ্রার অথবা টাকার মতন এটি ধরা বা স্পর্শ করা যায় না। এটি কোন ব্যাংক বা অন্য কোন মাধ্যমে রাখা যায় না। মুদ্রা ব্যাবস্থার বিকেন্দ্রীকরণের (Decentralized) উদ্দেশ্য থেকেই এই মুদ্রার ধারণা চালু হয়। Decentralized নিয়ে বিস্তারিত জানতে এখানে 👈 ক্লিক করুন। 

Bitcoin সর্ব প্র্রথম ২০০৮ সালের ১৮ আগষ্ট ইন্টারনেট জগতে bitcoin.org নামে একটি ওয়েবসাইটের ডোমেইন রেজিস্টার করা হয়। এ বছরেরই নভেম্বর মাসে সাতোশি নাকামোতো (Satoshi Nakamoto) নাম করে কোন ব্যাক্তি বা গোষ্ঠি গবেষণাপত্র (Research Paper or White Paper) অনলাইনে প্রকাশ করে এবং ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখ Public Ledger অনলাইনে অবমুক্ত করে। বিটকয়েনের সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় অনলাইনে একটি ওপেন সোর্স Public Ledger এর মাধ্যমে। Bitcoin নিয়ন্ত্রনকারী কোন দেশ বা সংস্থা নেই। তাই এই Bitcoin দিয়ে সারাবিশ্বে সকল প্রকার বৈধ-অবৈধ লেনদেন সম্পন্ন করা যায়।

Bitcoin এর মূল্য?

Bitcoin এর মুল্য খুবই অস্থিতিশীল। প্রতি মুহূর্তে এর মুল্য পরিবর্তিত হয়। প্রথম দিকে ১৩০৯ বিট কয়েন সমান ১ ডলার অথবা ৮৫ টাকা ছিলো। অবাধ ও নিয়ন্ত্রনহীন লেনদেন সুবিধার জন্য অতি দ্রুত সারাবিশ্বে বিট কয়েনের গ্রহণযোগ্যতা পায়। এটি প্রতি বছরই বাড়তে বাড়তে ২০১৭ সালে ১ বিটকয়েন এর মূল্য ১৫ হাজার ডলার অথবা ১ লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যায়। Bitcoin এর আজকের মূল্য ৬৮০০০ ডলার, যা বাংলাদেশী টাকাতে ৫৮ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা থেকেও বেশি। এমনও হতে পরে, বিটকয়েনের মুল্য আগামী ১ বছরে আকাশ পাতাল পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। আজ থেকে ১০ বছর পূর্বের Bitcoin এর মুল্য এবং বর্তমান সময়ে Bitcoin এর মূল্যের তফাত হিসাব করলেই আপনি বুঝে যাবেন, Bitcoin এর চাহিদা দিনদিন কতো বেড়ে চলছে।


Bitcoin আদান প্রদানের সুবিধা

ডিসেন্ট্রালাইজড (Decentralized) মুদ্রা

Bitcoin একটি ডিসেন্ট্রালাইজড (Decentralized) মুদ্রা, এটাকে আপনি ভার্চুয়াল কারেন্সি অথবা ডিজিটাল কারেন্সি (Virtual Currency or Digital Currency) বলতে পারেন, তাই Bitcoin এর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ শুধুমাত্র এটার মালিক ব্যতীত অন্য কারো কাছে থাকে না। অর্থাৎ, আপনার বিটকয়েনের আদান-প্রদানের সম্পূর্ণ ক্ষমতা শুধুমাত্র আপনারই থাকবে, কোন সরকার অথবা অন্য কোনো ব্যক্তির কাছে থাকবে না। 

দ্রুত লেনদেন

Bitcoin এর মাধ্যমে আপনি খুবই দ্রুত লেনদেন করতে পারবেন। অর্থাৎ, বিটকয়েন একজন থেকে আরেকজনের কাছে ট্রানজেকশন এর সময় খুবই কম লাগে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আপনার প্রদানকৃত অর্থ আরেকজনের কাছে পৌঁছে যাবে। এখানে তৃতীয় কোন ব্যক্তির হাত থাকে না, তাই এই প্রক্রিয়া খুবই দ্রুত সম্পন্ন হয়।

অসংখ্য লেনদেন

আপনি যত খুশি Bitcoin আদান প্রদান করবেন, এখানে কোন লিমিটেশন নেই অর্থাৎ আপনি অসংখ্যবার আপনার বিটকয়েন আদান-প্রদান করতে পারবেন। সাধারণত ব্যাংকিং সিস্টেমে প্রতিবার লেনদেনের কিছু সিমাবদ্ধতা থাকে এবং আপনি অসংখ্য লেনদেন করতেও পারবেন না। কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সি আদান প্রদান অথবা বিটকয়েন আদান-প্রদানে কোন প্রকার লিমিট থাকে না। 

সামান্য ফি

বর্তমান ব্যাংকিং সিস্টেমে একজন থেকে আরেকজনের কাছে কোন টাকা পাঠালে প্রচুর পরিমাণে ফ্রী কেটে নেয়। উদাহরণস্বরূপ, বিদেশ থেকে কেউ যদি আপনাকে বাংলাদেশে টাকা পাঠায় তবে সেখানে আপনাকে প্রচুর পরিমাণে ফি দিতে হয়। কিন্তু, এর তুলনায় Bitcoin লেনদেনে খুবই অল্প এবং খুবই সামান্য ফি কেটে নেয়া হয়। খুবই সামান্য ফি দেয়ার মাধ্যমে, আপনি আপনার ইচ্ছামত Bitcoin আদান-প্রদান করতে পারবেন। 

সারাবিশ্বে আদান-প্রদান

Bitcoin সারাবিশ্বে আদান-প্রদান করা যায়। সারাবিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে, একজন  আরেকজনের সাথে Bitcoin লেনদেন করতে পারবে। সাধারণত ব্যাংকিং সিস্টেমে, এক দেশ থেকে সকল দেশে টাকা পাঠানো সম্ভব হয় না। কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সি অথবা বিটকয়েনের কোন সীমাবদ্ধতা নেই। শুধুমাত্র বিটকয়েনের ওয়ালেট এর মাধ্যমে, যেকোন দেশ থেকে যেকোন মুহূর্তে এবং যেকোন সময়ে, যার সাথে ইচ্ছা তার সাথে Bitcoin আদানপ্রদান করা যায়। 

পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন

Bitcoin আদান-প্রদানে, পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন থাকে। কে বা কোন ব্যক্তি অথবা কোন গোষ্ঠী, কাকে অথবা কোন ব্যক্তি অথবা কোন গোষ্ঠীকে Bitcoin প্রদান করলো, সেটা সম্পূর্ন গোপনীয় থাকে। বিটকয়েনের আইডি অথবা বিটকয়েনের ওয়ালেট এড্রেস দিয়ে সেই বিটকয়েনের মালিককে খুঁজে পাওয়া কোনভাবেই সম্ভব না। এই কারনেই, Bitcoin অবৈধ জগতে বেশি জনপ্রিয়।

সকল কন্ট্রোল নিজের হাতে

বিটকয়েনের সম্পূর্ণ কন্ট্রোল সেই বিটকয়েনের মালিকের কাছে থাকে। সেই মালিক যাকে ইচ্ছা তাকে Bitcoin দিতে পারে এবং যার থেকে ইচ্ছা Bitcoin নিতে পারে। Bitcoin আদান-প্রদানের মাঝে তৃতীয় কোন ব্যক্তি থাকে না বিধায় বিটকয়েনের মালিক তার বিটকয়েনকে সম্পূর্ণভাবে ক্ষমতায়ন করতে পারে। এক কথায় বিটকয়েনের সকল কন্ট্রোল নিজের হাতেই থাকে। 

Bitcoin হ্যাক করা Impossible

Bitcoin হ্যাক করা সম্পূর্ণ Impossible, বিট কয়েন হ্যাক করা কোনভাবেই সম্ভব না। কারন, বিটকয়েন Public Ledger হিসেবে কাজ করে। কে কত বিটকয়েন এর মালিক, কে কাকে কত বিটকয়েন আদান প্রদান করল, সবকিছুই অনলাইনে বিদ্যমান। বিটকয়েন তৈরি করা হয়েছে Blockchain টেকনোলজির উপরে ভিত্তি করে। শুধুমাত্র Blockchain টেকনোলজির উপরে ভিত্তি করে তৈরি করার কারণেই বিটকয়েন কোনদিনও হ্যাক করা সম্ভব না। শুধুমাত্র বিটকয়েন কেনও, কোনও ক্রিপ্টোকারেন্সি হ্যাক করা সম্ভব না, কারণ সকল ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্লকচেইন এর উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে এবং ব্লকচেইন টেকনোলজির সবকিছু অনলাইনেই বিদ্যমান। যদি কারোও ইমেইল এবং পাসওয়ার্ড হ্যাক হয়, সেটা ভিন্ন কথা। কারো ইমেইল এবং পাসওয়ার্ড হ্যাক হওয়ার পরে, কেউ কারো বিটকয়েন বা অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি চুরি করে নিতে পারে কিন্তু ব্লকচেইন টেকনোলজি হ্যাক করে বিটকয়েন হ্যাক করা কোনদিনও সম্ভব না। ক্রিপ্টোকারেন্সি অথবা বিটকয়েন সবথেকে বেশি সিকিউর।

এছাড়াও Bitcoin আদান প্রদানে আরও অনেক সুবিধা রয়েছে

  • বিটকয়েন আয় এর জন্য সরকার বা অন্য কোন সংস্থাকে এর আয়ের হিসাব দিতে হয় না। 
  • কোন ব্যাবহারকারী যদি নিজে থেকে এর হিসাব বিবরণী অন্য কারও কাছে না দেয়, তাহলে এটা কেহ জানতে পারবে ন। 
  • কোন দেশের সরকার বা অন্য কোন সংস্থা বিটকয়েন একাউন্ট বাজেয়াপ্ত করতে পারবে না। 
  • প্রতিটি ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ব্যাংক'কে একটা নিদিষ্ট পরিমান অর্থ্য জমা দিতে হয় কিন্ত বিটকয়েন এ্যাকাউন্ট করার জন্য কোন অর্থ্য প্রদান করতে হয় না। 
  • Bitcoin ব্যবহার করতে কোন ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানের নিকট যাওয়ার প্রয়োজন হয় না, অনলাইন বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে Bitcoin খুব সহজেই ব্যবহার করা যায়। ইত্যাদি ইত্যাদি...


Bitcoin আদান প্রদানের অসুবিধা

Bitcoin এর বৈধতা

এখন পর্যন্ত ক্রিপ্টোকারেন্সি অথবা Bitcoin সব জায়গাতে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি, তাই Bitcoin সব জায়গাতে লেনদেন করা সম্ভব না। তুলনামূলকভাবে, এখন পর্যন্ত বিটকয়েন অনেক দেশেই অবৈধ। তাই, যেসকল জায়গাতে বিটকয়েনের গ্রহণযোগ্যতা আসেনি, সেসকল জায়গাতে বিটকয়েনের মাধ্যমে লেনদেন করা সম্ভব না। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আপনি যদি অনলাইন কেনাকাটা করতে চান Bitcoin এর মাধ্যমে, তবে সেইক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোন ওয়েবসাইটে বিটকয়েনের বৈধতা দেয়া হয়নি। এ কারণে বাংলাদেশ থেকে আপনি কোনো কিছু কেনাকাটা করতে চাইলে, সেটা বিটকয়েনের মাধ্যমে কেনাকাটা করতে পারবেন না। Bitcoin শুধুমাত্র সেই সকল জায়গাতেই আদান-প্রদান করা যায়, যে সকল জায়গাতে বিটকয়েনের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

Bitcoin মার্কেট খুবই অস্থিতিশীল

প্রতিনিয়ত বিটকয়েনের দাম বাড়ছে এবং কমছে, এই কারণে বিটকয়েনের মার্কেট খুবই অস্থিতিশীল। কারণ, আজকে বিটকয়েনের যা দাম, সেটা আগামীতে নাও থাকতে পারে এবং এর থেকে বেশিও হতে পারে। সেই একইভাবে, এখন থেকে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করলে, বিটকয়েনের দাম বাড়বে না কমবে সেটা কেউ বলতে পারবে না। 

Bitcoin ফেরতযোগ্য না

আপনি যদি ভুলে কখনো কাউকে বিটকয়েন দিয়ে দেন, তবে সেইক্ষেত্রে আপনি সেই বিটকয়েনটি আর ফেরত নিয়ে আসতে পারবেন না। শুধুমাত্র বিটকয়েন কেন? কোন ক্রিপ্টোকারেন্সি একজনকে একবার দিয়ে দিলে, সেটা আর ফেরত আনা যায় না অর্থাৎ আপনি আপনার ট্রানজেকশনকে রিভার্স করতে পারবেন না। আপনি যদি কাউকে বিটকয়েন ভুলক্রমে দিয়ে দেন, তবে সেই ব্যক্তি নিজে যদি আপনাকে বিটকয়েন ফেরত না দেয়, তবে কখনো আপনি আপনার বিটকয়েন ফেরত পাবেন না।

Bitcoin এর পরিমান মাত্র ২১ মিলিয়ন

বিটকয়েন আনলিমিটেড মাইনিং হবে না। বিটকয়েন এমনভাবেই প্রোগ্রাম করা হয়েছে যে, ২১ মিলিয়ন বিটকয়েন মাইনিং হবে, এর থেকে বেশি বিটকয়েন মাইনিং হবে না। বর্তমান সময় অনুসারে প্রায় ১৯ মিলিয়ন বিটকয়েন মাইনিং হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ, ২১৪০ সাল পর্যন্ত সকল বিটকয়েন মাইনিং হয়ে যাবে। এরপর আর কোন বিটকয়েন মাইনিং করা সম্ভব হবে না। 

এছাড়াও Bitcoin আদান প্রদানে আরও অনেক সুবিধা রয়েছে

  • ক্রিপ্টোকারেন্সি অথবা বিটকয়েনের মার্কেট খুবই প্রতিযোগিতা সম্পূর্ণ। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরি হচ্ছে, এ কারণে বিটকয়েনের ভবিষ্যতের অগ্রগতির দিকনির্দেশনার উপরে কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকে।
  • হঠাৎ করে বিটকয়েনের দাম কমে যাওয়ার কারণে প্রতিনিয়ত অনেক মানুষের  মূলধন কমে যায়।
  • বিটকয়েন এখন পর্যন্ত সকল প্রকার মার্চেন্ডাইজারে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি, তাই এটি লেনদেনে খুবই বড় একটা সমস্যা সৃষ্টি করে।

অবশেষে বলা যায়, বিটকয়েন হচ্ছে আধুনিক বিশ্বেরে এক যুগান্তকারী মুদ্রা ব্যবস্থা। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে সব কিছুই ডিজিটালাইজেশন ঘটছে। এই জিডিটালাইজেশনের ছোঁয়া লাগবে আমাদের মুদ্রা ব্যাবস্থাতেও। প্রযুক্তিবিদদের মতে, অদূর ভবিষ্যতে ডিজিটাল কারেন্সিই হবে লেনদেনের একমাত্র মাধ্যম। আইনি জটিলতার কারণে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে বিটকয়েনের উপর যে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে, আশা করা যায় ভবিষ্যতে এটি একটি প্রচলিত মুদ্রা ব্যবস্থা হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে। তাই প্রযুক্তির বিপ্লবে, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সবকিছু যেনে রাখা ভালো।


আরও পড়ুন;














Close Menu